রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
রিয়াজ মহামুদ আজিম:
সারাদেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি না থাকলেও খোঁদ বরিশাল নগরীতে লোডশেডিংয়ের অব্যাহত যন্ত্রণায় দুঃসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার ক্রটির কারণে নগরীর বিশাল এলাকার বিপুল জনগোষ্ঠীকে দুঃসহ গরমে দিনরাত লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে।
ফলে বিভাগীয় সদরের সরকারী-বেসরকারী জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে পানি সরবরাহের মত জনগুরুত্বপূর্ণ পরিসেবা বিপর্যয়ের কবলে পরেছে। বিতরণ ব্যবস্থার গলদের কারণে মধ্যরাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ৩৬ ডিগ্রি তাপপ্রবাহে ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে নগরবাসীর। ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মারগুলো ওভারলোডেড হয়ে পড়ায় মাসের পর মাস লোডশেডিংয়ের আশ্রয় নিয়ে কোনমতে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকো। খুব সহসা এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনার কথাও বলতে পারছে না দায়িত্বশীল মহল।
সূত্রমতে, বরিশাল মহানগরীর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে রূপাতলী ৩৩ কেভি সাবস্টেশন বিদ্যুৎ গ্রহণ করে অপর তিনটি ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনের ৩৩ হাজার ভোল্টেজে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। ওইসব সাবস্টেশনের ৩৩/১১ কেভি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে ১১ কেভি বিতরণ লাইনে নগরীর প্রায় এক লাখ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে ওজোপাডিকো।
সূত্রে আরও জানা গেছে, মহানগরীর কাশীপুর ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনের ১০ এমভিএ ক্ষমতার দুটি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারই ওভারলোডেড হয়ে পরায় পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ সাবস্টেশনে সংযুক্ত আটটি ফিডারে সান্ধ্য পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ২৪ মেগাওয়াট। দিনের বেলাও চাহিদা রয়েছে ২০ মেগাওয়াটেরও বেশি।
অথচ দুটি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট হলেও ৩০ বছরের পুরনো এই বিদ্যুৎ স্থাপনা থেকে এখন কোন মতেই ১৮ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে দিনের বেলাও কম বেশি লোডশেডিং করে পরিস্থিতি কোনমতে সামাল দেয়া হলেও সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এসময়ে গড়ে দুটি করে ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওইসব পাওয়ার ট্রান্সফর্মার রক্ষায়। এমনকি বেশিরভাগ সময়ই ট্রান্সফর্মারগুলো অতিমাত্রায় গরম হয়ে ট্রিপ করছে। ফলে কোন কোন সময় ট্রান্সফর্মারের ওপর পানি স্প্রে করে ঠান্ডা রাখার মতো বিকল্প ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হচ্ছে।
একই অবস্থা ঝালকাঠীর নলছিটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের। সেখানের ৩৩/১১ কেভি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারে প্যাডেস্ট্যল ফ্যানের সাহায্যে দিনরাত বাতাস দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘœ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রায় একই পরিস্থিতি দক্ষিণাঞ্চলে ওজোপাডিকোর আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে। তবে খোঁদ বরিশাল মহানগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট নাজুক।
ভূক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, দিনরাতই একাধিক ফিডারে বিতরণগত ক্রটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। অনেক এলাকায় মধ্যরাতেও বিতরণগত ক্রটি নিয়ে লাইনগুলো ট্রিপ করছে। এমনকি একমাত্র রূপাতলী ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন ছাড়া অন্য সাবস্টেশনগুলোর কোন ফিডার মধ্যরাত বা শেষরাতে ট্রিপ করলে খুব সহসা তা চালু করারও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছেনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের পক্ষ থেকে টেলিফোন পাবার পরে সাবস্টেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ ফিডারগুলো চালু করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বরিশাল মহানগরীর প্রায় এক লাখ গ্রাহককে যেসব ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তার অন্তত অর্ধেকই ওভারলেডেড হয়ে আছে। ফলে নগরীতে প্রতিমাসে কমপক্ষে পাঁচটি ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাচ্ছে ওভারলোডেড হয়ে। এসব বিতরণ ট্রান্সফর্মারের ড্রপ আওউটগুলো ক্রুটিপূর্ণ। একটি ট্রান্সর্মারের ফিউজ পুড়ে গেলে পুরো ফিডার বন্ধ করেই তা ঠিক করতে হয়। কোন ট্রান্সফর্মারেই এমসিপি না থাকায় প্রায় সব ট্রান্সফর্মারই সার্বক্ষণিকভাবে ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে প্রতিমাসেই একাধিক ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে।
এছাড়াও প্রায় ৩০ বছরের পুরানো জরাজীর্ণ ১১ কেভি ও .০৪ কেভি বিতরণ ও সরবরাহ লাইন নিয়ে শুধু বরিশাল মহানগরী নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাই চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েক লাখ গ্রাহকের কোন সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি বিতরণ কোম্পানি ‘ওজোপাডিকো’।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, বরিশালে কাশীপুরসহ আরও কয়কটি সাবস্টেশনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের যেসব সমস্যা রয়েছে তা অচিরেই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চলছে। আগামী মার্চের মধ্যে কাশীপুর সাবস্টেশনে নতুন ট্রান্সফর্মার স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পুরো বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে দুটি প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে।
Leave a Reply